• +8801920170413
  • azizislam50@gmail.com

একজন বাংলাদেশী ডাক্তারের জন্য পাবলিক হেলথে ক্যারিয়ারের রূপরেখা

একজন বাংলাদেশী ডাক্তারের জন্য পাবলিক হেলথে ক্যারিয়ারের রূপরেখা

.
একটা ছেলে বা মেয়ে যখন MBBS বা BDS পাস করে ডাক্তার হয়, ততদিনে তাদের মাঝে ক্লিনিকাল ক্যারিয়ার নিয়ে একটা ধারণা তৈরী হয়ে যায়। তারা জানে যে তাদের সামনে কি কি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে — পোস্টগ্রাডুয়েশন ট্রেইনিং করা, পোস্টগ্রাডুয়েশন এক্সাম দেয়া, BCS দেয়া ইত্যাদি। দেশের বাইরে যেতে হলে PLAB , AMC USMLE এক্সাম ক্লিয়ার করা। পোস্টগ্রাডুয়েশন শেষ হলে consultant , তারপর একসময় প্রফেসর। এইসব কিছুর মধ্যে আবার নিজের চেম্বার প্র্যাকটিস গুছিয়ে নেয়া। এই চ্যালেঞ্জগুলি জানার সুবাদে একটা ছেলে বা মেয়ে ডিসিশন নিতে পারে তার কি করা উচিত, কি করা উচিত না।
.
কিন্তু পাবলিক হেলথ ক্যারিয়ার এর রূপরেখা সম্পর্কে অনেকেরই বিস্তারিত ধারণা নেই — অনেক ছোট ভাইবোনের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে তাদের ধারণা MPH করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। MPH এর পরে ক্যারিয়ারের বাঁকগুলি কি কি, চ্যালেঞ্জগুলি কি কি এই বিষয়গুলি নিয়ে তাদের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাই আসুন জেনে নেই একজন বাংলাদেশী ডাক্তারের পাবলিক হেলথে ক্যারিয়ারের রূপরেখা।
.
যেহেতু আমাদের মেডিকেল কারিকুলামে পাবলিক হেলথ এর প্রকৃত শিক্ষা দেয়া হয়না, তাই অধিকাংশ ডাক্তারেরই পাবলিক হেলথের হাতেখড়ি হয় MPH করার মাধ্যমে। অনেকেই আবার বিভিন্ন পাবলিক হেলথ প্রজেক্টে কাজ করার মাধ্যমে এই ফিল্ডে ক্যারিয়ার শুরু করেন। পড়াশুনা বা জব – যেভাবেই ক্যারিয়ার শুরু করুক না কেন, কিছুদিনের মাঝে একজন ডাক্তারের সামনে পাবলিক হেলথ ক্যারিয়ারের তিনটি ট্র্যাক উন্মোচিত হয়।
.
১. Teaching – এমপিএইচ শেষ করে সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে টিচার হিসেবে যোগদান করা যায়। এই ক্ষেত্রে BMDC স্বীকৃত MPH থাকাটা বেশ জরুরি। অনেকেই এখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে MPH ফ্যাকাল্টি হিসেবে কাজ করেন। এই ক্ষেত্রে বিদেশী মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। টিচিং ক্যারিয়ারে আপনি প্রফেসর হতে পারবেন, টিচিং এর পাশাপাশি পাবলিক হেলথ এর বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করতে পারবেন, এবং কনসালট্যান্সি করতে পারবেন ইত্যাদি।
.
২. Program – পাবলিক হেলথ এর একটি বিশাল অংশ হচ্ছে field implementation যা বিভিন্ন ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল NGO করে থাকে। এই ক্যারিয়ার ট্র্যাককে মোটা দাগে বলা যায় progam। বাংলাদেশে এই ফিল্ডে কাজ করার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। WHO,UNICEF,UNDP,BRAC Save the Children,CARE – এই সকল প্রতিষ্ঠানে এই ধরণের ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এই ক্যারিয়ার ট্রাকে উপরে উঠতে হলে দরকার ফিল্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা, ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি, policy, diplomacy,negotiation করতে জানা ইত্যাদি। পিএইচডি এবং পাব্লিকেশন mandatory না হলেও এই ট্র্যাকের অনেকেই সেগুলি করে থাকেন। এই ট্রাকে প্রজেক্ট-বেজড জব হলেও, জব সিকিউরিটি একেবারে খারাপ নয়। এই ট্রাকের peak হচ্ছে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর বা কান্ট্রি-ম্যানেজার হওয়া। অনেকেই আবার বিভিন্ন দেশে consultancy করার সুযোগ পেয়ে যান।
.
৩. Research – এই ট্রাকে কাজ করার জন্য একজনকে MPH শেষ করার পরে পাবলিক হেলথ নিয়ে রিসার্চ করে এমন অর্গানাইজেশন এ কাজ করতে হয়। বাংলাদেশে পাবলিক হেলথ রিসার্চ অর্গানাইজেশন হাতে গোনা কয়েকটি – icddrb JPGSPH,IEDCR ইত্যাদি। এর ট্রাকের লোকজনের জব সিকিউরিটি সবচেয়ে কম – কারণ সকল রিসার্চ জব প্রজেক্ট-বেজড। ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাবার হাতিয়ার তিনটি – দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা, রিসার্চ পেপার, এবং রিসার্চ গ্র্যান্ট। দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এই ট্রাকে সবচেয়ে বেশি। পড়াশুনা শেষ করে অনেকেই দেশের বাইরে ক্যারিয়ার গড়েন, আবার অনেকেই দেশে ফিরে রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে কাজ করেন। এই ট্র্যাকের peak হচ্ছে দেশে বা দেশের বাইরে যেকোনো ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হওয়া, সায়েন্টিস্ট হওয়া ইত্যাদি।
.
পাবলিক হেলথ অনেক বড় একটি ক্যারিয়ার ফিল্ড, এখানে এক একজনের ক্যারিয়ার এক এক ভাবে বিকশিত হয়। তাই এই তিনটি ট্র্যাক সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলার যাতে ক্যারিয়ার ডিসিশন নিতে অনেকের সুবিধা হয়। নিজের ভালোলাগা, মন্দলাগা, এম্বিশন, জীবনযাত্রার বিচারে সবাই যেন পাবলিক হেলথকে ক্যারিয়ার হিসেবে ভেবে দেখতে পারে।
.
পাবলিক হেলথ ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার চিন্তাধারা এবং মতামত আলোচনা করুন।

DMC 2005-06

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *